আরজি কর কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই আবহে আজ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। মামলার প্রথম দিনের শুনানিতেই একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। এই আবহে সকল আন্দোলনকারী চিকিৎসককে কাজে ফেরার অনুরোধ করেন জাস্টিস চন্দ্রচূড়। আর আরজি করের ঘটনায় পুলিশ এবং হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। (আরও পড়ুন: একজনই দোষী? এমনই কি বলা হয়েছে আরজি কর কাণ্ডের ময়নাতদন্তে রিপোর্টে?)
আরও পড়ুন: হঠাৎ ঘুম ভাঙল পুলিশের, SIT গঠনের পর এবার সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রুজু
আজ সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়, একজন চিকিৎসক খুন হলেন রাতে। দেহ উদ্ধার হল সকালে। এরপর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়। তবে খুনের মামলা রুজু হয় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। নির্যাতিতার বাবা গিয়ে এফআইআর করেন। তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী করল? এর আগে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সন্দীপ ঘোষ আরজি করের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কী ভাবে আবার অন্য কোথাও যোগ দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, 'প্রথমে ঠিক ভাবে এফআইআর করা হয়নি। পুলিশ কী করছিল? একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?' বিচারপতি আরও বলেন, 'বিকেলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল রাত ১১টা ৪৫মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ? ওই সময়ে মৃতার বাবা-মা ছিলেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল এফআইআর দায়ের করা।' এদিকে রাজ্যের তরফ থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল যুক্তি সাজাতে চেষ্টা করেন। অপরদিকে প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে কী করা হবে বলে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তার জবাবে কপিল সিব্বল বলেন, শীর্ষ আদালত যা বলবে তাই করব। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাজ্য সরকার যেন শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদীদের ওপর কোনও বল প্রয়োগ করা যাবে না। এদিকে সিবিআইকে আগামী ২৩ তারিখের শুনানিতে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডের সাথে জড়াবেন না দুর্গাপুজোকে, আবেদন ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের
উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের চার তলায় চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ। সেই ঘটনা ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়। মৃত চিকিৎসকের মা-বাবা অভিযোগ করেন, তাঁদের প্রথমে বলা হয়েছিল যে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরপর জানা যায় খুন। পরে ধর্ষণের মামলাও রুজু করা হয়। এদিকে এই ঘটনায় পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করা হয়। এই আবহে পুলিশ আধিকারিক থেকে হাসপাতাল কর্তপক্ষের আধিকারিকদের বদলি করে সরকার। তবে হাসপাতালের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করেন। যদিও পদত্যাগ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ করার ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিষয়টি ধামাচাপা দেওার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। (আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডের আবহে জোড়া ফুল শিবিরে চিড় আরও চওড়া? মমতার পদক্ষেপে জল্পনা)
আরও পড়ুন: বিস্ফোরক শ্মশানের ম্যানেজার, আরজি কর কাণ্ডে শেষকৃত্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
আরও পড়ুন: '... হয়ত ময়নাতদন্তই হত না', আরজি কর কাণ্ডে বড় দাবি চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর
এই আহে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা উঠলে রাজ্য সরকারকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। উচ্চ আদালত বলার পরই সন্দীপ ঘোষ ছুটিতে যান। এদিকে পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত সন্দীপ ঘোষকে কোনও প্রশাসনিক পদে বসানো যাবে না বলেও জানায় উচ্চ আদালত। এরই সঙ্গে পুলিশি তদন্তে আস্থা না রেখে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিবিআই-এর হাতে। উল্লেখ্য, এর আগে পুলিশই এই মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল। তবে দাবি ওঠে, এই ঘটনায় একজন জড়িত থাকতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে বাকিদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসকরা আন্দোলনে নামেন। গোটা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করে শীর্ষ আদালত।