ভারতে আনা হল মুম্বই হামলায় অন্যতম মূলচক্রী তাহাউর রানাকে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জঙ্গিকে সম্ভবত দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে পেশ করা হবে। সেজন্য আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে আধা-সামরিক বাহিনী এবং দিল্লি পুলিশের অফিসারদের। সেইসঙ্গে তিহাড় জেলেও যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিহাড় জেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে কড়া সুরক্ষার মধ্যে একটি সেলে রাখার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে। তাঁরা আদালতের নির্দেশের কপির জন্য অপেক্ষা করে আছেন।
যদিও তাহাউরকে কখন ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে, তারপর তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেইসব বিষয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) তরফে কিছু জানানো হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনআইএয়ের তরফে শুধুমাত্র জানানো হয়েছে, ‘সাফল্যের সঙ্গে’ ৬৪ বছরের তাহাউরকে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। আর তারপর ভারতীয় গোয়েন্দা এবং ভারতীয় বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে তাহাউরকে।
ফাঁসিতে ঝোলানো হোক তাহাউরকে, আর্জি সকলের
আর আমেরিকা থেকে আসার পরে রানার ফাঁসির জন্য অপেক্ষা করে আছেন মুম্বইয়ের মানুষ। ২৬/১১ মুম্বই হামলার ভুক্তভোগী দেবিকা নটওয়ারলাল রোটাওয়ান দাবি করেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সবথেকে বড় জয় এটা। ভারতে এনেই তাহাউরকে জেরা করে পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সম্পর্কে বের করতে হবে। কীভাবে মুম্বই হামলার ছক তৈরি করা হয়েছিল, কীভাবে সেই হামলা চালানো হয়েছিল, সেটার খুঁটিনাটি বের করে আনতে হবে তাহাউরের মুখ থেকে। আর তারপর দ্রুত তাহাউরকে ফাঁসি ঝুলিয়ে দেওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন দেবিকা।
একইসুরে তাহাউরের ফাঁসির দাবি তুলেছেন মুম্বই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার হেমন্ত বাওধনখড়। যিনি মুম্বই হামলার পরে গঠিত দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, '২৬/১১ মুম্বই মামলার মাস্টারমাইন্ড তাহাউর রানাকে যে ভারতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, সেটা এনআইএয়ের একটা বড় কৃতিত্ব হয়ে থাকবে। আমরা আশা করছি যে ওর ফাঁসি হবে। যা আমরা পুরো দুনিয়ার কাছে কড়া বার্তা পৌঁছে দিতে পারব যে যারা ভারতের দিকে খারাপ চোখে তাকিয়ে দেখবে, তাদের ছাড়া হবে না।'
তাহাউরকে ভারতে আনার বিষয়টি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে তাহাউরকে প্রত্যর্পণের বিষয়টা ঠিক সেই কারণেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ। ২৬/১১ হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা কোনও বিদেশি নাগরিককে প্রথমবার ভারতে আনা হল। যা ভারতের একটা জয় হিসেবে বিবেচিত হবে। দীর্ঘদিন ধরে ভারত যে আইনি লড়াই চালাচ্ছে, সেটারও জয় হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সেইসঙ্গে ওই মহলের মতে, তাহাউরকে যে ভারতে আনা হচ্ছে, তার ফলে এমন অনেক তথ্য মিলতে পারে, যা প্রমাণ করে দেবে যে পাকিস্তানের মদতে সন্ত্রাসবাদ চালানো হচ্ছে। আর তাতে পাকিস্তানের ঘুম উড়ে যেতে পারে।
২৬/১১ হামলায় তাহাউরের ভূমিকা
১) এনআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ডেভিড হেডলি কোলম্যানের যোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে ভারতের ভিসা পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিল তাহাউর। যে আগে তাহাউর পাকিস্তান সেনার মেডিক্যাল কোরের সদস্য ছিল। পরবর্তীতে কানাডায় চলে গিয়েছিল।
২) তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হেডলির পরিকল্পনার বিষয়ে পুরোপুরি অবগত ছিল পাকিস্তানি-বংশোদ্ভূত জঙ্গি। সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাহাউরের নামে যে নথি জমা পড়েছে, তাতে ২৬/১১ হামলার আগে ভারতে এসে হেডলির সঙ্গে ২৩১ বার যোগাযোগ করেছিল।
আরও পড়ুন: 'ভারতে পাঠালে মরে যাব', প্রত্যর্পণ ঠেকাতে US আদালতে আর্জি মুম্বই হামলার চক্রীর
৩) আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মেজর ইকবাল নামে একজনের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ ছিল তাহাউরের। যে ইকবাল পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হ্যান্ডলার এবং ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী বলে অভিযোগ উঠেছে।