আলিপুরদুয়ার জেলায় ভয়াবহ হাতির হামলা। মৃত্যু হল একই পরিবারের তিনজনের। যার মধ্যে রয়েছে ১ মাস ৬ দিনের শিশুকন্যাও। শুক্রবার গভীর রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ফালাকাটা ব্লকের কুঞ্জনগরের সভাপতি মোড় এলাকায়। যা ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। প্রতিবাদে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও বাঁশ ফেলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: রাতভর তাণ্ডব হাতির, ধুলিসাৎ হয়ে গেল ১০টি বাড়ি! ভাঙল স্কুল, ICDS সেন্টার
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম মাখনরানি দাস (৬৫), তাঁর ছেলে মনোজ দাস এবং মাখনরানির সদ্যোজাত নাতনি মামনি। জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার সময় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। সেই সময় অস্বাভাবিক শব্দ শুনে মনোজ দাস ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। সেই সময় হাতির সামনে চলে আসেন মনোজ। তখন দাঁতাল হাতি তাঁকে পিষে দেয়। এদিকে, ছেলের আর্তচিৎকার শুনে মনোজবাবুর মা মাখনরানি দাস তাঁর নাতনি মানসীকে কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন হাতিটি তাঁদের উপরও আক্রমণ চালায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাখনরানির। তাঁর কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটি। ঘটনায় আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে মনোজ ও শিশুটির মৃত্যু হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার রাস্তায় নামেন স্থানীয়রা। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন। বনদফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, এই এলাকায় প্রায় হাতির হানার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, বন দফতর একেবারেই নিষ্ক্রিয়। কোনও রকম আগাম সতর্কতা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান জলদাপাড়া বনবিভাগের আধিকারিকেরা।
বন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়াইল্ডলাইফ অফিসার নভজিৎ দে জানান, বনকর্মীরা ওই হাতির দল তাড়ানোর কাজ করছিলেন। সেই সময় মনোজবাবু হাতির সামনে পড়ে যান। তারপরেই ওই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। তিনি আরও জানান, বন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, মৃত তিনজনের জন্য পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন। তিনি বলেন, এই ঘটনা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। বারবার এমন ঘটছে, অথচ বনদফতর কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। বিধানসভায় এই বিষয়টি তিনি তুলেছিলেন বলে জানান। প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তিনি।